এক দেশে ছিল অদ্ভুত এক নিয়ম। এই নিয়ম অনুযায়ী, দেশে যারা বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং কাজ করতে অক্ষম হয়, তাদের পাহাড়ে ফেলে আসতে হতো। সে দেশের রাজা মনে করতো, বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার বোঝা কমালে সাধারণ মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

এই কঠোর নিয়ম চালু থাকাকালীন সময় এক পিতা-পুত্র একে-অপরকে খুব ভালোবাসতেন। ভাবেই সময় গড়িয়ে চললো। পিতারও বয়স হয়ে গেল, তিনি আর কাজ করতে পারতেন না। দেশের নিয়ম অনুযায়ী, ছেলে বাধ্য হলো তার পিতাকে পাহাড়ে ফেলে আসতে । কিন্তু পিতাকে ছেড়ে থাকতে পারার কথা ছেলে কোন ভাবতেই পারছিল না। তবুও, শাস্তির ভয়ে সে তার পিতাকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ের দিকে রওনা দিল। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছচনোর পর ছেলের মন কেঁদে উঠল। শেষ পর্যন্ত বাছেলে তার পিতাকে সেখানে রেখে আসতে পারল না। ছেলেটি তার পিতাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল এবং বাড়ির পিছনে লুকিয়ে রাখল। এবং নিয়মিত চুপিচুপি খাবার এনে তার পিতাকে খাওয়াতে লাগল।
একদিন সে দেশের রাজা তাঁর প্রজাদের বুদ্ধি পরীক্ষা করতে চাইলো। রাজা ঘোষণা করল, "যে ছাই দিয়ে বোনা দড়ি এনে দিতে পারবে, তাকে পুরস্কৃত করা হবে!"
লোকজন অবাক হয়ে গেল। ছাই দিয়ে কি কখনও দড়ি তৈরি করা সম্ভব? ছেলেটিও এই ধাঁধার কথা শুনে তার পিতাকে জানালো। ছেলেটির পিতা বলল, "একটা দড়ি নিয়ে বড় পাত্রে পেঁচিয়ে রাখো, তারপর পাত্রটি ভেতরের দড়িটি জ্বালিয়ে দাও।"
ছেলে পিতার কথা মতো কাজ করল। ফলে দড়ি পুড়ে গেল, কিন্তু দড়িটি না নড়ানোর কারণে ছাই ঠিক আগের মতো দড়ির আকারেই থেকে গেল।
চেলেটি এই পোড়া দড়িটি রাজাকে দেখাল। ফলে ঘোষিত পুরস্কার ছেলেটি জিতল।
এক মাস পর, আবারো রাজা পরীক্ষার আয়োজন করলেন। দ্বিতীয় পরীক্ষায় রাজা একটি কাঠের ডাল দিলো এবং বলল, "এই ডালের শিকড় আর আগার পার্থক্য খুঁজে বের করতে হবে! যে এটি করতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে! "
ডালের দু’প্রান্ত দেখতে একই রকম ছিল আর তাই কেউই এর পার্থক্য খুঁজে পেল না।
ছেলে কাঠের ডালটি বাড়িতে এনে পিতাকে দেখাল এবং রাজার করা প্রশ্নটি জানালো। ছেলেটির পিতা বলল, "ডালটি পানিতে রাখো; যে প্রান্তটি বেশি ডুবে যাবে, সে প্রান্তটি গোড়ার দিক। আর যে প্রান্তটি ভেসে থাকবে, সে প্রান্তটি আগার দিক।"
ছেলে তার পিতার উপদেশ মতো কাজ করল এবং রাজাকে প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিয়ে আবারও পুরস্কার জিতল।
এর কিছুদিন পর রাজা আরও একটি কঠিন ধাঁধা দিলো। রাজা বলল, "এমনএকটি ঢোল তৈরি করতে, যে ঢোলে কোনো আঘাত ছাড়াই শব্দ করবে!"
এমন কথা শুনে সবার মাথা ঘুরে গেল। কেউ-ই এমন ঢোল বানানোর কোন উপায় খুঁজে পেল না। ছেলে আবারও তার পিতার শরণাপন্ন হল। তার পিতা তাকে বলল, " একটি ঢোল বানাও, আর তার ভেতরে মৌমাছির একটি চাক রাখো।"
ছেলেটি পিতার নির্দেশ মতো ঢোল বানিয়ে রাজাকে দিল। রাজা যখন ঢোলটি হাতে নিয়ে নাড়ালো তখন ভেতরের মৌমাছিরা ওড়তে লাগলো, যার ফলে ঢোলে শব্দ হলো!
তখন রাজা বিস্মিত হয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি কীভাবে এত কঠিন ধাঁধাঁগুলোর উত্তর পেলে?"
ছেলেটি উত্তরে বলল, "রাজামশাই, আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা নাই। আমার বৃদ্ধ পিতাই সকল কঠিন ধাঁধাঁর উত্তর আমাকে দিয়েছে। আর আমি তা আপনাকে দিয়েছি।"
ছেলের কথা শুনে রাজা খুবই অবাক হলো এবং নরম হয়ে গেলো। রাজা উপলব্ধি করল, জীবনের কঠিন সমস্যার সমাধান বের করতে অভিজ্ঞতা মূল্যবান সবচেয়ে বেশি।
সঙ্গে সঙ্গে রাজা ঘোষণা করল, "এখন থেকে আর কোনো বৃদ্ধকে পাহাড়ে ফেলে বা রেখে আসা যাবে না!" এরপর থেকে সকল বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দে থাকতে লাগলো।
মূল্যবান শিক্ষা
উপরুক্ত কাহিনি থেকে আমরা এটাই শিক্ষা আপি যে, অভিজ্ঞতা অমূল্য। বয়স্করা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। তাদের যত্ন নেওয়া আমাদের শুধু দায়িত্বই নয়, বরং এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য।
একজন মা গর্ভ থেকে জন্ম দেন-লাওলন-পালন করেন, আর পিতা নিজের কাঁধে তুলে মানুষ করেন। তারা মহান রবের সাক্ষাত রহমত-বরকত
Post a Comment